পিতা-পুত্র হলেও তারা পরিচিত বাপকা-বেটা হিসেবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবের জনপ্রিয় মুখ বাপকা-বেটা। বাপ (পিতা) ‘শুভাশীষ ভৌমিক শুভ’ আর বেটা (পুত্র) ছয়বছর বয়সী ঋতুরাজ ভৌমিক হৃদ্য। বাপকা-বেটা নামে ফেসবুক ও ইউটিউবে তাদের একটি চ্যানেল রয়েছে। যেখানে বাপকা-বেটা’র গাওয়া গানগুলো শ্রোতা-দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে । করোনা পরিস্থিতিতে বাসায় কি করছেন বাপকা-বেটা? জানতেই কথা হয় শুভাশীষ ভৌমিকের সঙ্গে।

কেমন আছেন?

এইতো ভালো আছি, বাহ্যিক খারাপের মধ্যে যতটা ভালো থাকা যায়।

করোনা পরিস্থিতিকে কিভাবে মোকাবেলা করছেন?

করোনা এখন কমিউনিটিতে ছড়িয়ে গেছে। তাই আমাদের উচিত বাহিরে না যাওয়া, ঘরে থাকা। সতর্ক থাকা। আমি সাধারণত বাহিরে যাচ্ছি না। অতিপ্রয়োজনে যদি বাহিরে যেতে হয়, যাওয়ার আগে ও পরে সতর্ক থাকার চেষ্টা করছি। বাসায় এসেই কাপড়চোপড়গুলো ধুয়ে ফেলা, সবার আগে জুতা নিয়ে ঘরে প্রবেশ না করা, বাসায় ঢোকার পড়ে টাচ পয়েন্টগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা। আর যতুটু পারছি ঘরে বসে আশেপাশের মানুষগুলোকে হেল্প করার চেষ্টা করছি।

বাসায় কিভাবে সময় কাটছে?

বাসায় সময়কাটানোটাকে একটি রুটিনেরমত করে নিয়েছি। সকালে অনলাইনে অফিস করি, পাশাপাশি ছেলে ঋতুরাজ অনলাইনে স্কুলের ক্লাস করে। তারপর অনলাইনে কিছু কোর্স করছি- সেখানে সময় দেই। দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ছেলে, স্ত্রী, বাবা-মাকে সাথে নিয়ে মুভি দেখছি। বিকালে বারন্দায় গিয়ে গান চর্চা করি। সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে কথা বলি। আমি কয়েকটি দাতব্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সাথে পরোক্ষভাবে যুক্ত আছি। রাতেবেলা তাদের সাথে কথা বলে কিছু করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি সময় পেলে বাবা-মাকে, স্ত্রীকে হেল্প করার চেষ্টা করি। এ বন্ধের সময়গুলোতে নিজের কাজগুলো নিজে করার চেষ্টা করছি।

এই মুহুর্তে ঘরেবসে থাকা মানুষগুলোর বিনোদনের জন্য বাপকা-বেটার কোন পরিকল্পনা আছে?

এখন কোন মানুষই বিনোদন মুডে নেই। তার পরেও আমরা মানসিক প্রশান্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি গান তোলার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া কয়েকজন শিল্পি মিলে একটি প্রজেক্টে কাজ করেছি। গানটিতে সাথে ছিলেন শাহরুখ কবির, মারুফ। গানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। গতকাল আমাদের একটি গান প্রকাশিত হয়েছে।গানটি আমাদের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে শুনতে পারবেন। ‘এক টাকায় আহার’ এবং অন্যান্য দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানুষ যাতে অনুদান দিয়ে সহায়তা করে সে বিষয়ে মানূষকে উদ্বুদ্ধ করছি, ফেসবুকে আপলোড করার মাধ্যমে।

ঋতুরাজ ঘরবন্দি করোনা পরিস্থিতিকে কিভাবে দেখছে, সে কি বলছে বিষয়টিকে?

ঋতুরাজ এখনও অনেক ছোট ! তার পরেও এটুকু বুঝে- এ পরিস্থিতিতে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। করোনাভাইরাস মানুষে-মানুষে ছড়ায় তাই সে বাহিরে যেতে চায় না। পাশাপাশি নির্ধারিত সময় পর-পর সে ঘরে হাত ধোয়।এটুকু সে বোঝে এবং তাকে বোঝানোর চেষ্ট করছি- আমরা একটি জটিল সময় পার করছি।

দিনের পর দিন ঘরে থাকছেন, ঘরের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আপনার স্ত্রী পালন করছেন তার সম্পর্কে বলেন?

আমি বাবা-মা’র সাথে থাকি। ঘরে আমার মা ও আমার স্ত্রী সবচেয়ে বেশি কাজ করে। বাবা ও আমি সাধ্যমত চেষ্টা করি তাদেরকে হেল্প করার। তারা ঘরে থেকে যেই কাজগুলো করছে, এখন আমরা ঘরে থেকে সেই কাজগুলোর মূল্যটা বুঝতে পারছি এবং অনুধাবন করছি। তাই তাদের কাজে হেল্প করার চেষ্টা করছি। রান্নাবান্না ছাড়া, কারন রান্না পারি না।

করোনা মোকাবেলায় যারা যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছে তাদের সম্পর্কে কিছু বলতে চান?

আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখিনি। নির্জন ঘরের মধ্যে বসে থাকা, আমার কাছে এটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে কম মনে হচ্ছে না। আমাদের ভালোর জন্য প্রতিদিন যেসব মায়ের সন্তানরা ঘর থেকে বের হচ্ছেন- যেমন ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা, জরুরী প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যাক্তিরা । তাদের কারনে আমরা এখনও ঘরে বসে খেতে পারছি। যারা জীবন বাজি রেখে করোনা মোকাবেলায় কাজ করছেন তারা মোক্তিযোদ্ধাদের থেকে কোন অংশে কম নয়। দেশে অনেক ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তার পরেও যে, তারা নির্ভয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এটা আসলেই প্রশংসার দাবীদার। তারা সত্যি একজন মুক্তিযোদ্ধার সমান। আমাদের উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের পরিশ্রমকে মূল্যায়ন করা। কিন্ত অনেকে নিজেদের তথ্য গোপন করে ডাক্তারদের কাছে যাচ্ছে, এতে করে তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এটা আমার কাছে খুব খারাপ লাগে। আমরা নিজেরা সৎ থাকতে পারছি না এবং যারা আমাদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন আমরা তাদেরকে বিপদে ফেলে দিচ্ছি।

করোনামুক্ত আগামীর বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চান?

করোনা আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়ে যাচ্ছে। আমরা অনেক বিনোদন ছাড়াও ঘরে থাকতে পারি। আমরা কাজের লোক ছাড়া নিজের কাজ নিজেরা করতে পারি। ঘরে থেকেও কাজ করা যায়। আমরা অনেক কিছু খরচ করতাম, সময় নষ্ট করতাম, অনেক কিছুই শিখিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অনেক শ্রমঘন্টা নষ্ট হয়ে গেছে, এই শ্রম ঘন্টাগুলোকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে পুষিয়ে দিতে হবে। না হয় আমাদের অর্থনীতি অনেক ক্ষতির মূখে পড়বে। বাংলাদেশের মানুষ, আমরা এতদিন হাইজিন বিষয়টি বুঝতামই না। করোনা আমাদেরকে হাইজিন অভ্যাসটি শিখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। করোনা আরো অনেক অজানা শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে আমাদেরকে, যেগুলো আমাদেরকে কাজে লাগাতে হবে। যেমন সচেতনতাবোধ আমাদের মধ্যে সবচেয়ে কম ছিল, যা আমাদেরকে ভালোভাবে শিখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সচেতনতাকে কাজে লাগাতে হবে।

Source: https://www.unitednews24.com